রবিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রশিদুল আলম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ওই মামলায় গত ৪ অক্টোবর সকালে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ রাজধানীর বনশ্রীর বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলার বাদী কুমিল্লা নগরীর রাজাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লন্ডনপ্রবাসী মিনহাজুর রহমান।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘এ মামলার অভিযোগ গুরুতর, সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও আগের স্মারক নম্বর দেখিয়ে প্রতারণা করা হয়। তাই সরকারি দপ্তরে বড় একটি প্রতারকচক্রের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির (নিশাত) সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিশাত খান ২০২০ সালের ৫ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (উন্নয়ন ও অধিশাখা) উপসচিব এস এম নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে প্রবাসী মিনহাজুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অন্যকে হাজির করে ধানমণ্ডির একটি ফ্ল্যাটের ভুয়া হেবা দলিলের কাগজপত্র সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে তথ্য গোপন করে ওই নেত্রী তাঁর নিজের নামে ফ্ল্যাটের নামজারি করে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে বাসা দখলে নেন। তবে ওই প্রবাসী দেশে ফিরে ফ্ল্যাটের ভূমি কর দিতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে জালিয়াতির বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।
এতে তদন্তে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগটি প্রমাণিত হয়।
মামলার বাদী মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘এর আগেও গত বছরের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় সাড়ে ৩০ শতাংশ জমির ভুয়া হেবা দলিলের মামলায় নিশাত আহমেদ গ্রেপ্তার হয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই কারাগারে যান। নিশাত খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, কাবিন ও জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, চুরি ও অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নীলফামারী জেলায় বর্তমানে ১১টি মামলা চলমান আছে।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নিশাতের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে এখনো আলোচনায় আসেনি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন বলেন, ‘নিশাত খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের শেষ নেই। এ কারণে তাকে মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে ২০২১ সালে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু মহিলা আওয়ামী লীগে পদ হারিয়ে পরে সে নতুন করে এ বছর জেলা আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হয়ে আবারও প্রতারণা শুরু করেছে। তাই দলের সুনাম রক্ষায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির ধানমণ্ডি থানার এসআই মো. খোকন মিয়া বলেন, ‘একজন উপসচিবের স্বাক্ষর ও সরকারি দপ্তরের নথি জালিয়াতিচক্রের মাধ্যমে আসামি এ প্রতারণা করেছেন। সে একা নন। এসব চক্রের কারণে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। তাই মামলার প্রধান আসামি নিশাত খানকে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আসামিকে রবিবার রাত থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে।’